নিজস্ব সংবাদদাতা: সাংবাদিক পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জে ভয়ংকর চক্রের কাছে সাধারন মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ছে। নামসর্বস্ব অনুমোদনহীন
অনলাইন পোর্টালের কার্ড ঝুলিয়ে এরা গোটা নারায়ণগঞ্জ জেলায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ আগষ্টের পর তাদের এসকল অপকর্ম বৃদ্ধি
পেয়েছে বহুগুন। তারা ভুয়া কার্ড ব্যবহার করে সাংবাদিক পরিচয়ে রীতিমতো ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। যার প্রমান ও ভিডিও ফেসবুক দুনিয়ায় ভায়রাল। সামনে থেকে চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছে ফতুল্লার কায়েমপুর এলাকার জুয়ারু মুসা মিয়ার পুত্র সুমন ওরফে ফরমা সুমন (৩০)। যার নামে ফতুল্লা মডেল থানায় মাদক, ছিনতাই, নারী নির্যাতন এমনকি হত্যা মামলা পর্যন্ত রয়েছে। চক্রটির বাকি সদস্যদের মধ্যে আরও আছেন- তন্ময় (মাদক মামলার আসামী), জান্নাত ও প্রশান্তসহ আরও বেশ ক’জন ধান্দাবাজ। যাদের নামে নগরীর সচেতন নাগরিকদের অভিযোগের অন্ত নেই। তবুও তারা ধরাছোয়ার বাইরে। বরং আশ্চর্য্যজনকভাবে এই চক্রের প্রত্যেক সদস্য নারায়ণগঞ্জ পুলিশ মিডিয়া গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছে! যেখানে সংযুক্ত রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
গণমাধ্যমের কাছে আসা ডাকাতির একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অসামাজিক কার্যকলাপ হয় এমন একাধিক ফ্লাটে সাংবাদিক পরিচয়ে দল বেধে হানা দেয় সুমন ওরফে ফরমা সুমনের নেতৃত্বাধীন অসাধু চক্রটি। দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে সুমনকে বলতে দেখা যায়, দরজা খোলেন না হয় পানিসম্যান্ট (সাজা) আরও বেশি হবে। এরপর ভেতরে প্রবেশ করে দাবিকৃত টাকা না পেয়ে দেহ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেধড়ক পেটাতে দেখা যায় সুমন ওরফে ফরমা সুমনকে। আর তাকে সহযোগীতা করতে দেখা যায়- তন্ময়, জান্নাত ও প্রশান্তসহ বেশ ক’জনকে। যাদের প্রত্যেকের কাছে ছিল নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালের প্রেস কার্ড ও সাংবাদিকতার বিভিন্ন সরঞ্জাম। সে সকল প্রেস কার্ড তারা নিজেরাই প্রিন্ট করে ব্যবহার করছে। অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পরিবারকে ব্লাকমেইলিং করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সুমন ওরফে ফরমা সুমন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই অপরাধ চক্রের মূলহোতা সুমন ওরফে ফরমা সুমনের নামে ফতুল্লা মডেল থানায় রয়েছে বেশ ক’টি মামলা। যার মধ্যে ২০১৩ সালে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় চাঞ্চল্যকর ফুটবলার রাসেল হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছিল সুমন। এ মামলায় সে সময় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয় ফরমা সুমন। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মামলার বাদির সাথে আপোষে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে স্ত্রীর দায়েরকৃত নারী নির্যাতন মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করে সুমন। এরপর ২০২১ সালের ১২ মে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকা থেকে ১২০০ পিস ইয়াবা সহ সুমন ওরফে ফরমা সুমন ও মাদক কারবারী তন্ময়কে গ্রেফতার করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। প্রায় ৬ মাস কারাভোগের পর জামিনে এসে পরের বছর ১২ মে ফতুল্লার ইসদাইরে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে দুই নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর ও রক্তাক্ত জখমের ঘটনায় আবারও পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয় সুমন।
অপরদিকে, সূত্রের খবরানুযায়ী- শীতলক্ষ্যা নামক এক অনুমোদনহীন নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টাল খুলে নিজেরাই নিজেদের প্রেস কার্ড বানিয়ে শহর থেকে শহরতলী দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে সুমন ওরফে ফরমা সুমন, তন্ময়সহ সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি। সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবজি, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলিং এমনকি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে এই চক্রের সদস্যরা। এ সকল চাঁদাবজ, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলিং, ডাকাতরা যদি সাংবাদিক পরিচয় দেয় তাহলে পেশাদার সাংবাদিকদের উপর জনসাধারন আঙ্গুল তুলতে দিধা করেননা। তাই সকল পেশাদার সাংবাদিকদের এসকল চোর ডাকাতদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করতে হবে বলে বিজ্ঞমহল মনে করেন।