স্টাফ রিপোর্টার,সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জর তাড়াশ উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরের বহিষ্কারাদেশ জেলা বিএনপি কর্তৃক প্রত্যাহার করায় তাড়াশ উপজেলা বিএনপিসহ তৃণমূল বিএনপি'র নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। এদিকে তৃণমুল বিএনপি'র বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিতর্কিত এ নেতার বহিষ্কার প্রত্যাহার আদেশ দ্রুত স্থগিত করার জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

দলীয় সুত্রে জানাযায়,নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করায় তাড়াশ উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার ২নং বারুহাস ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত বিনোদপুর গ্রামের অধিবাসী আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরকে উপজেলাব্যাপী মাইকিং করে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হঠ্যাৎ করে জেলা বিএনপি তার সেই বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় এবং বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি গত ১৭ জুন জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক শেখ মোঃ এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। এদিকে দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামীলীগের সুফলভোগী ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত ও আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান মানিক এর ঘনিষ্ঠ সহচর আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরকে আকস্মিকভাবে দলে পুনর্বহাল করায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে। এতে সংঘাত ও উত্তেজনা এড়াতে অনতিবিলম্বে বিতর্কিত আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরের বহিষ্কার প্রত্যাহার আদেশ স্থগিত করা না হলে তাড়াশের তৃণমূল বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। "গত ১৭ বছরে যে ব্যক্তি ৫ মিনিট আওয়ামীলীগ করেছে বা আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে ছবি আছে, সেই ব্যক্তির বিএনপিতে আসার সুযোগ নেই।" বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বক্তব্যের সাথে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কাজের মিল খুঁজে না পেয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিশ্বাস-জেলা বিএনপির নেতাদের ভুল বুঝিয়ে উক্ত বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করানো হয়েছে। গত ১৭ বছরে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরের প্রকৃত কর্মকাণ্ড জানার পর জেলা বিএনপি নিশ্চয়ই তার বহিস্কার প্রত্যাহার আদেশ স্থগিতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের নিকট থেকে জানাযায়, ২০০৪ সালে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর ও ফিরোজুল ইসলাম (বর্তমান বারুহাস ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক) বিনোদপুর খেলার মাঠে অশ্লীল নাচ গানের আয়োজন করে। এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বেনজির আহমেদ শফিকে অবগত করে অনুষ্ঠানটি বন্ধের জন্য অনুরোধ করেন এবং বেনজির আহমেদ শফি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর ও ফিরোজুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে বিনোদপুর বাজারে বেনজির আহমেদ শফিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হলে স্থানীয় সাবেক এমপি আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান তালুকদার ও জেলা বিএনপির নির্দেশে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরকে তাৎক্ষণিক উপজেলাব্যাপী মাইকিং করে বহিষ্কার করা হয়। এতে বহিষ্কারের পর থেকে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর স্থানীয় আওয়ামীলীগে ভীড়ে যায় এবং আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান মানিক এর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে চাকুরী বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে এবং নিজের ছেলেসহ অনেককে সেনাবাহিনীতে চাকুরী নিয়ে দেয়। এরপর, ব্রিগেডিয়ার নজরুল হাসান মানিক ড্রেসার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর রাতারাতি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিরাজগঞ্জ-১ এর আওতাধীন উপজেলা সমুহসহ তাড়াশ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে রাজা বনে যায়। এমনকি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে তাড়াশ উপজেলাসহ উল্লাপাড়া,সলঙ্গা ও রায়গঞ্জ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেয়ার জন্য মিটার প্রতি খরচ বাবদ ১০ থেকে ১২ হাজার করে টাকা নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে অর্থশালী হয়ে ওঠে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর। পর্যায়ক্রমে নিজের নামে দুটি ডিপ শ্যালো প্রজেক্টও চালু করে নেয়।

এছাড়া, ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান মানিক এর বড়ভাই ড. কামাল হোসেন ৬৪সিরাজগঞ্জ -৩ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (তারা মার্কা) হিসেবে নির্বাচন করলে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর,তার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন ড. কামাল হোসেন এর পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচন করে। এরপর, ধীরে ধীরে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর নিজের ওপর চেপে বসে নির্বাচনী নেশা। ২০১৭ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান মানিক এর সার্বিক সহযোগিতায় আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর ইউপি নির্বাচনে বারুহাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কিন্তু পরাজিত হন। ২০১৮ সালে বিনোদপুর খেলার মাঠে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গণসংযোগে বিএনপি'র এমপি প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান তালুকদারের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রাণনাশের হামলাকারী ও গাড়ি ভাঙচুরকারীদের সাথে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরের একান্ত ঘনিষ্ঠতা স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিলো।

২০২২ সালে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের নির্দেশনা অমান্য করে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর আবারও বারুহাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে(ঘোড়া প্রতীক) নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সেনা সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান মানিক সরাসরি তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু,শেষমেষ,আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর পরাজিত হন। এদিকে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর, নৌকা প্রতিকের বিজয়ী চেয়ারম্যান মঈনুল হোসেনের সাথে হাত মিলিয়ে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর বিনোদপুর বাজার কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। এরপর, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদের ডামি নির্বাচনে ৬৪ সিরাজগঞ্জ -৩ আসন থেকে সাবেক সেনা সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান মানিক নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর নিজ দায়িত্বে বিনোদপুর বাজারে ভাড়াকৃত নির্বাচনী প্রচারণা অফিস পরিচালনা করেন এবং এই কাজে তাকে সার্বিক সহযোগীতা করেন তার ভাতিজা,ইউনিয়ন জামাতের আমির গোলাম কিবরিয়া। তাছাড়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল হাসান মানিক এর নির্বাচনী গণসংযোগে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর,তার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হওয়ার পর বিনোদপুর বাজার কমিটি বিলুপ্ত করার বারবার দাবী ওঠায় একপর্যায়ে ১১মে, ২০২৫ খ্রি. বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আয়োজিত বিনোদপুর খেলার মাঠে একটি আলোচনা সভায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে উক্ত বাজার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করলে পরের দিন অর্থাৎ ১২ মে, ২০২৫ খ্রি. তারিখে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর আওয়ামী ও জামায়াত পরিবারের উঠতি বয়সের কিছু ছেলেদের নিয়ে উক্ত বাজার কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে মিছিল করে।

এদিকে বারহাস ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, দল যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তিকে দলে নিতেই পারে। তবে, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যে কারণ দেখিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ, আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর গত ১৭ বছরে স্বৈরাচার হাসিনা পতনের আন্দোলন সংগ্রামে কোনোরকম অংশগ্রহণ করেন নাই। বরং তিনি ও তার পরিবারবর্গ ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলো এবং এর সকল তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। তারা আরও জানায়,২৮ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি. ঢাকা মহাসমাবেশের পর আমরা যখন ঘরছাড়া হয়েছিলাম তখন আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর বিনোদপুর বাজারে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীদের সাথে চা-আড্ডায় ব্যস্ত থেকেছেন। আর, তার ছেলে, বর্তমান ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিছুর রহমান নিশ্চিন্তে উত্তরবঙ্গে চাকুরী করেছে। এছাড়াও, বর্তমানে বিএনপি'র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর বিএনপির ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে নানান রকম অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন যার স্বাক্ষী এলাকাবাসী। স্থানীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানায়,আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বর আওয়ামীলীগের দোসর এবং সর্বোচ্চ সুফলভোগী।

এব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সদ্যবিলুপ্ত কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জানান, উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা এবং এসংক্রান্ত বিষয়ে জেলা বিএনপি আমাদের নিকট থেকে কোন মতামত গ্রহণ করেনি। তারা আরও বলেন, গত ১৭ বছরে স্বৈরাচার হাসিনা পতনের আন্দোলন সংগ্রামে আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ মেম্বরের কোথাও কোনোরকম অংশগ্রহণ বা ভূমিকা ছিলো না, উপরন্ত তার ভুমিকা ছিল বিতর্কিত। সুতরাং বিতর্কিত এ নেতার বহিষ্কার প্রত্যাহার আদেশ স্থগিত করার জন্য তৃণমূল বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি উঠেছে সে দাবির সাথে তারা একমত পোষন করে এ আদেশ প্রত্যাহারের জন্য তারাও জেলা বিএনপির নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।