সাংবাদিকতা অত্যন্ত চমৎকার এবং চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। এই পেশায় যুক্ত হতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত জ্ঞান আর বিশ্বব্যাপী জানাশুনো। তাই এটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগও সবার হয়ে ওঠেনা। যদিও এই জানাশুনোর সাথে খুব কমই পরিচয় আমার। আমার কিঞ্চিৎ জ্ঞানে যতদূর জানা, এটি স্রেফ অণু: যেন ক্ষুদ্রতর কণা। যতদূর জেনেছি, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামায় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে অন্তত পৃথিবীর যেকোন সমস্যা সমাধানের দ্বারপ্রান্তে হলেও পৌঁছনো সম্ভব।
মনে আছে? গত০ ৯ই আগস্ট ১৯৭৪ সালে প্রবল প্রতাপশালী মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনকেও ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিলো Impeachment হয়ে। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইমপিচমেন্ট, তারপর পদত্যাগ করেন নিক্সন।
অবশ্য অবসর গ্রহণের প্রায় ২০ বছর সময়, নিক্সন তার স্মৃতিকথা এবং অন্যান্য নয়টি বই লিখেছিলেন।
তবে মূর্ধা কথা হলো এই, প্রায় অসম্ভব সব রকমের যে কোন কিছুতেই সম্ভাবনার আলো ছড়াতে পারে মুক্ত, স্বাধীন সাংবাদিকতা।বর্তমানে এই মহান পেশাটি আর আগের জায়গায় নেই। সাংবাদিকদের পর্যাপ্ত সুযোগ নেই মুক্তবাক্ চর্চার কিংবা লেখনীর। তাই সৃষ্টিও হয়না মোনাজাতউদ্দিন এর মত মহান সাংবাদিক এর।
অন্যদিকে যে-কেউ চাইলেই এখন রাতারাতি সাংবাদিক বনে যেতে পারেন। প্রয়োজন নেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা সাংবাদিকতার জ্ঞান। প্রয়োজন একটা ফেসবুক পেইজ আর ছোট্ট একটা মাইক্রোফোনের। তাই বলে ভাববেন না নাগরিক সাংবাদিকতা কিংবা মোজো’র বিপরীতে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, ব্যাপারটা মোটেও অমন নয়। এখন সময়ে কোন-কোন জায়গায় সাংবাদিকতা মানেতো সরকারি দপ্তরগুলোয় অর্থ সংগ্রহের অপপ্রয়াস আর রাজনৈতিক দলের হয়ে বিশেষ প্রচার মাধ্যম। সাংবাদিকতা মূলত জনকল্যাণমুখী মহান পেশা হলেও বর্তমান সময়ে তা ক্ষেত্রবিশেষে জন দুর্ভোগের কারণ। এটা যেমন সাংবাদিকতার নৈতিক অবক্ষয়; তেমনি দেশের পুরো সিস্টেমের সার্বিক বিপর্যয়ও বটে। যা একটি দেশের সার্বভৌমত্বের বিখণ্ডায়ন। কানে মন্দ শোনালেও সত্য এই যে, বর্তমানে দেশের প্রেক্ষাপট এমন, আপনাকে অবশ্যই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কিংবা সরকারের সাথে সহমত পোষণ ও সমন্বয় রেখে কলম ধরতে হয়। অন্যথায় দু-কলম কালিমার কারণে আপনার প্রতিষ্ঠানও মুহূর্তে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানও দিনশেষে আপনার দায়ভার গ্রহণ করবেনা উল্টো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আপনাকে তড়িৎ অব্যহতি দিতে কিঞ্চিৎ কালক্ষেপণ করবে না।
তবে আমার মনে হয় ক্ষমতাসীনদের এই স্বৈরতন্ত্র, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ কিংবা দুঃসাহসিকতা; যা আমাদের ক্রমেই ছিন্নমূল করে দিচ্ছে; দেবেও। যার দায়ভার একান্ত আমাদের, আমাদের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা কিংবা অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য। আজকাল সাংবাদিকরাই সাংবাদিকদের প্রধান শত্রু। আমরা সাংবাদিকরা খুব কমই দাঁড়াই সহকর্মীদের পাশে। কারো পতনে নিত্যানন্দ অনুভব করি। ঔদ্ধত্য আর দাম্ভিক আচরণের মধ্য দিয়ে চলি বীরদর্পে, যেন প্রত্যেকেই যে যার যার অবস্থান থেকে বেশ ক্ষমতাবান ও প্রবল প্রতাপশালী।
দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে বর্তমানে সাংবাদিকরা রাজনীতির রোষানলে পরে মামলারও স্বীকার হয়। অনেক সময় প্রবীণ সাংবাদিক ও গ্রেফতার হয়। এদিকে জেলা -উপজেলায় প্রায় সবখানেই হলুদ আর অপ-সাংবাদিকতার ছড়াছড়ি। আজকাল সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার থেকে রাজনীতিটাই ঢের বেশি করে। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় খবর নিয়ে দেখেন সাংবাদিকদের ক্ষমতা আর সংগঠন এর অভাব নেই। কোন কোন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেতো দেখা যায় কর্মীর থেকেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি অনেকাংশে বেশি।
সম্প্রতি দেশের স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিক এর ডিক্লেয়ারেশন বাতিল ও হয়ে যায়। লজ্জাজনক হলেও বলতে হচ্ছে যে; সে পত্রিকায় কর্মরত আমাদের সহকর্মীর জন্যে ১০টা মিনিটে রাস্তায় দাঁড়াতে পারিনি আমরা, উল্টো অগোচরে উল্লাস করছি।সাংবাদিকদের অস্তিত্ব আর লেখনীর স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন পারস্পরিক সদয় আচরণ এবং একই কাতারে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। আমাদের উচিৎ নিজেদের এক পরিবারের অংশ জেনে সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াবার মানসিকতা স্থির করা। তবেই সাংবাদিকতার আগামী হবে আরো সুন্দর, সুগম ও প্রসারিত।
লেখক :সাংবাদিক মো.ইসমাইলুল করিম
দৈনিক আজকের কক্সবাজার বার্তা প্রতিনিধি।