আতিকুজ্জামান (শার্শা)যশোর: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যশোর-১ (শার্শা) আসনে রাজনীতির মাঠে বাড়ছে উত্তাপ। তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দলের মনোনয়ন প্রতাশীরা। এই আসনে আওয়ামী লীগ দৃশ্যত অনুপস্থিত থাকায় নির্বাচনী প্রতিযোগিতা মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে অন্তত চারজন নেতা মাঠে সক্রিয় থাকলেও জামায়াতের রয়েছেন একজন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন যশোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ পেয়ে নির্বাচন করেন।
যদিও সেই নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী তৎকালিন সময় জোর করে কেন্দ্র দখল করে বিজয়ী হয়েছিলো। মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, এর আগেও কয়েকবার মনোনয়ন পেয়েছি।২০১৮ সালেও পেয়েছিলাম।আগামিতে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাই যোগ্য আমি মনে করি।তারপরও এর আগে বিএনপি যখন রাস্ট্র ক্ষমতায় ছিলো। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমার একটি বড় অবস্থান ছিলো।এ কারনে অনেক কাজ করতে পেরেছি।এলাকার বেকার ছেলে মেয়েদের চাকরিতে সহযোগিতা করেছি।
নিঃস্বার্থভাবে এলাকার উন্নয়নের কাজও করেছি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার ফলে রাস্তাঘাটে, স্কুল, মাদ্রাসার বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন করেছি।যার কারনে মানুষ এটা মনে রেখেছে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন,আমরা যেহেতু সীমান্তবর্তী এলাকা আমাদের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা আছে এগুলো ইনশাআল্লাহ আমি সমাজের সবাইকে এক সাথে নিয়ে মোকাবেলা করবো এবং শার্শার উন্নয়নে কাজ করবো।আমাদের এখানে একটি বড় সম্পদ বেনাপোল বন্দর।এটিও উন্নয়নে আমি কাজ করবো।এছাড়া বিগত সরকারের আমলে বিএনপির অনেক যোগ্য কর্মিদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করানো হয়েছে।
আমি মনে করি চাকরি পাওয়াটা প্রত্যেকটা নাগরিকের অধিকার। আগামিতে দলবাজি না করে যোগ্য সবাইকে চাকরির সু-ব্যবস্থা করবো বলে তিনি জানান। এ আসনে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দুঃসময়ে দলের পাশে থাকা এবং তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠন তাকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। নাভারণ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতির মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি তার, পরে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি, এক-এগারোর দুঃসময়ে বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে নেতৃত্ব দেন এ উপজেলায়। ২০০৮ সালে সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দল পরিচালনা করছেন।
এছাড়াও তিনি শার্শা সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নির্বাচিত সাবেক দু বারের চেয়ারম্যান ছিলেন। রাজপথের টানা সাড়ে ১৫ বছরের সক্রিয়তা, ৪৬টি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও দলের পাশে থাকা, এমনকি কারাবন্দি অবস্থায় মেয়ের মৃত্যু ও বাবার মৃত্যুশোক সয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা—সব মিলিয়ে তাকে তৃণমূলের কাছে একজন নিবেদিত প্রাণ নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বলেন, “আমি কখনো পিছিয়ে যাইনি। সংকটে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি, মৃত মানুষের জানাজায় থেকেছি, মামলা-হামলা উপেক্ষা করে রাজপথে ছিলাম।
দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।” ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন তালিকায় থাকলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে এবার তৃণমূলের জোরালো সমর্থন তার পক্ষে কাজ করবে বলে মনে করছেন তিনি। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি বর্তমান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান লিটন এবং উপজেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি বর্তমান দলের প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধু। খায়রুজ্জামান মধু বলেন, “বিএনপির শুরু থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত। কখনো দল পরিবর্তন করিনি। তৃণমূলের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নুরুজ্জামান লিটন বলেন, আমি শার্শা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম।পরে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেছি।
আমার নামে ঢাকায় খুলনায় রাজনৈতিক মামলা আছে। দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দলের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি । মাঠ পর্যায়ে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।তাই সকল দিক বিবেচনা করে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়োন পাবো বলে আশা করছি। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান।২০০৮ সালের জোট ভিত্তিক নির্বাচনে তিনি মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। তিনি জামায়াতের প্রার্থী হলেও তার সর্বদলীয় জনপ্রিয়তা রয়েছে এলাকায়।
মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা,ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত শার্শা গড়তে চাই। বেনাপোল বন্দরকে দেশ উন্নয়নের সোপান করে তুলতে চাই। মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে তরুন প্রজন্ম কে রক্ষা করতে চাই।দলমত ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সততা ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির মান ও পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে উপজেলার শিশু ও তরুণদের চরিত্রবান, যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করব।খাল,বিল ও বাওড় গুলো দখলমুক্ত করে দুস্থ ও জনসাধারণের কল্যাণে কাজে লাগতে চাই বলে তিনি জানান।
বর্তমানে যশোর-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৬ জন, নারী ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২ জন। স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপি যদি যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিতে পারে এবং দলীয় ঐক্য বজায় থাকে, তবে এই আসনটি যাবে বিএনপির ঘরে। এই আসনে আওয়ামী লীগ ইতিহাসে ৭ বার, বিএনপি ৩ বার, জামায়াত ১ বার করে জয়ী হয়েছেন। তবে জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় শার্শায় আওয়ামী লীগ কার্যত অনুপস্থিত, ফলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।