1. admin@dainikajker-bangladesh.com : ajkerbangladesh :
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২,৫০০ কেজি হিরোইন সহ ১ জন মাদক ব্যবসায়ী আটক রূপগঞ্জের মাসকো স্কুলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত কার্নিভাল অনুষ্ঠিত রূপগঞ্জে আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি সদস্য গ্রেফতার সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য মনোনীত হলেন শিল্পপতি রুহী আফজাল বেলকুচিতে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে যুবককে গণধোলাই আমার দেশ’ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা—ঝিকরগাছায় প্রতিবাদ তালায় ইউএনও রাসেলের পক্ষে মানববন্ধনের প্রস্তুতি, সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে উত্তাল সাংবাদিক সমাজ বন্দরে ক্রাউন সিমেন্টের গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে আহত-১ বান্দরবানে গোসল করতে গিয়ে ২ মাদ্রাসা-ছাত্রীর মৃত্যু তালা উপজেলার বিতর্কিত ইউএনও শেখ রাসেল চাকুরি জীবনে ৯ দেশ সফল করেছেন

লামায় রাবার ফ্যাক্টরি স্থাপনের পরিকল্পনা, আতঙ্কে কোয়ান্টামের ৩ হাজার শিক্ষার্থী

  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
  • ২৮ বার পাঠ করা হয়েছে

মো. ইসমাইলুল করিম নিজস্ব প্রতিবেদক : পার্বত্য জেলাী বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছে। বিবর্ণ পাহাড়ি এলাকাটিকে পরিকল্পিতভাবে স্বাস্থ্যকর ও প্রকৃতিবান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে তুলেছে সংস্থাটি। ওই এলাকায় স্থাপন করেছে অসহায় ও বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার জন্য কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ। আবাসিক এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে প্রায় তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী। কিন্তু লামার স্বনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এবং ওই এলাকার সুপেয় পানির উৎস আন্ধারি খালের উৎপত্তিস্থলে রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের উদ্যোগ ঘিরে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এরই মধ্যে লামার সরই ইউনিয়নের গোধূলি এলাকায় প্রস্তাবিত রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। যেখানে রাবার ফ্যাক্টরি নির্মাণের করা হবে তার পাশেই কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের আবাসিক ক্যাম্পাস।

ফ্যাক্টরি স্থাপনের মধ্যে দিয়ে রাবার প্রসেসিংয়ের কাজ শুরু হয়ে গেলে এর বর্জ্য সেখানকার পরিবেশকে দূষিত করে তুলবে। চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াবে এবং শব্দ দূষণ হবে। এতে স্কুলটির তিন হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়বে। পাহাড়ের স্নিগ্ধ পরিবেশে লেখাপড়াসহ শারীরিক-মানসিক সুস্থতা নিয়ে তারা যেভাবে বেড়ে উঠছিল, সেটিতে বাধা পাবে। তাদের লেখাপড়া, খেলাধুলা ও দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবেশগত একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাফল্য ও অর্জনে চরমভাবে ব্যাঘাত ঘটবে, রাবার ফ্যাক্টরি স্থাপনকে ঘিরে এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বান্দরবান লামার স্বনামধন্য আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। এটি পার্বত্য অঞ্চলের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানকার আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী এখন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং বুয়েটে পড়ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় শিশু-কিশোর কুচকাওয়াজেও অনবদ্য সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের পাশের হার শতভাগ।

পিইসি, জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি—প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আর এর কারণ হলো ক্লাসে নিয়মিত লেখাপড়া করা। জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্কুলভিত্তিক বিভাগে ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়ে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল চারবার দেশসেরার মর্যাদা অর্জন করেছে। প্রস্তাবিত রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরির মাত্র ১৬০ মিটার দূরত্বে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবাসিক ও স্কুল ক্যাম্পাস। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। গত কিছু দিন ধরে কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা এ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পার্বত্য এ অঞ্চলে বর্তমানে রয়েছে প্রায় হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩০০ প্রজাতির পাখি ও ২০০ প্রজাতির প্রজাপতির নিরাপদ অভয়ারণ্য। কিন্তু তিন দশক আগে এখানকার চিত্রটি এমন ছিল না। ওই সময় পুরো জায়গাটা ছিল আগাছায় পূর্ণ, শতবর্ষী সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল।

আর পাহাড়গুলো ছিল পোড়া। বর্ষার শেষে আগাছা নির্মূলের জন্যে পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হতো। মশা আর ম্যালেরিয়া ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। কোয়ান্টামের কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় রুক্ষ ও ঊষর এই অঞ্চলটিকে সবুজায়ন করা হয়। ধারাবাহিক বনায়ন ও যত্নায়নে সরই ইউনিয়নের ওই এলাকাটি পরিণত হয় সবুজ দিগন্তে। প্রস্তাবিত রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি ওই এলাকা স্নিগ্ধ সতেজ পরিবেশের জন্য হয়ে উঠেছে হুমকির কারণ। এ ছাড়াও আন্ধারী খালের উৎপত্তিস্থলে প্রস্তাবিত রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি হলে সুপেয় পানির সংকটে পড়বে স্থানীয় কয়েক হাজার পাহাড়ি ও বাঙালি বাসিন্দা। কৃষি, মৎস্য চাষসহ দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের একমাত্র প্রাকৃতিক উৎস্য আন্ধারী খালে পানি দূষণের আশঙ্কা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ১ হাজার ৬০০ একর জমি থাকতে কেন আন্ধারী খালের উৎসে ও কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের পাশে এসে ফ্যাক্টরি বানাতে হবে? প্রস্তাবিত রাবার প্রসেসিংফ্যাক্টরি অন্যত্র স্থাপনের দাবি জানিয়ে গত ১৭ মার্চ লামা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন এলাকাবাসী।

রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে কিনা জানাতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি আমাদের কাছে একটি আবেদন করেছে। আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শন করবেন। সবদিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিন বলেন, আমরা পার্বত্য এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায়ে কাজ করে যাচ্ছি। পরিবেশের ক্ষতি এবং পানির উৎস্য নষ্ট হয়, এমন কাজ করতে দেওয়া হবে না। পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছি। পরিবেশ দূষণের দায়ে আমরা জরিমানাও করেছি।

কাজেই সবদিক ভেবেই রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, আমার জানামতে দুই বছর রাবার ফ্যাক্টরি স্থাপনের কাজ বন্ধ আছে। ওই এলাকায় ফ্যাক্টরি স্থাপনের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। তবে পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদটি শেয়ার করুন
© All rights reserved © 2025
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি