মহিদুল ইসলাম (শাহীন) খুলনা ব্যুরোচীফ। খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগে চোর সন্দেহে ঘের মালিক মুজিবর রহমান (মুজি) ও কৃষক ফিরোজকে বেধড়ক মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৭জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কৃষক ফিরোজ। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের নারিকেলী চাঁদপুর এলাকায় মো. দিলদার হালদার এর ছেলে ফিরোজ হালদার (৩৮) পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছে। গত ৭ এপ্রিল রাত অনুমান ৯টার সময় বাড়িতে যাওয়ার পথে চাঁদপুর পালপাড়া ব্রীজের মাঝামাঝি পৌঁছালে ঘাটভোগ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম নন্দুর যোগসাজসে অন্যান্য বিবাদী মো. আসিফ, মো. সৈকত ও মো. সাজ্জাদসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জন তাকে বেধড়ক মারপিট করে কাছে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
পরে তাকে ভ্যানে করে জোরপূর্বক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং পুনরায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সকল বিবাদীগণ মিলে তার উপর নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ১নং বিবাদী ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ কে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য বলেন এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি প্রদান করেন । এঘটনার পর রাত আনুমানিক ২টার সময় আহত ফিরোজকে তার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় সে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা বেগতিক দেখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি উপজেলার কাজদিয়া গ্রামের তুষার বিশ্বাসের মাছের ঘেরে কে বা কারা বিষ প্রয়োগ করে। এ ঘটনায় স্থানীয় ঘের মালিকগণ মুজি নামে এক ব্যক্তিকে চাঁদপুর এলাকায় তার নিজ ঘেরের বাসা থেকে সন্দেহজনক ভাবে আটক করে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান এক সালিশে আরসাদুল ও পারভেজ কে ১ লাখ টাকা এবং মুজিবর রহমান (মুজি)কে ১লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার কথা বলেন। পারভেজের পিতা ফিরোজের নিকট কয়েকবার ক্ষতিপূরণের টাকা চাইলে সে না দেওয়ায় মারপিট করা হয়। পরে যারা বিচার ও মারপিট করেছে তাদের নামে আদালতে মামলা দায়ের করে ফিরোজে। এছাড়া ফিরোজের চাচাতো ভাই হেমায়েত হালদার সঠিক কথা বলায় স্থানীয় একটি মহল তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করানো ও বিভিন্ন হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছেন।
যে কোন সময় তার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে এই মহলটি বলে ধারণা করছেন তিনি। ঘের মালিক তুষার জানায়, মুজিবর রহমান মুজিকে তার নিজ ঘেরের ঘর থেকেই চোর সন্দেহে গভীর রাতে ধরা হয় এবং পরের দিন দেখতে পাই আমার ঘেরের মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মুজির ঘের আর আমার (তুষার) ঘেরের দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। তাছাড়া মুজির কাছে মাছ ও বিষাক্ত কোন দ্রব্য পাওয়া যায় নাই এবং পারভেজ ও আরসাদুলকে তারা ওই রাতে কোথাও পায় নাই বলে তুষার জানায়। অথচ তুষার থানায় লিখিত অভিযোগে জানায়, পারভেজকে মাছ সহ ঘের থেকে আটক করেছে। এ ব্যাপারে মুজিবর রহমান মুজি বলেন , উক্ত এলাকায় আমি ১৭ বছর যাবত ঘের করি।
আমার ঘেরের বাসায় আমি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ৮/১০ জন লোক আমাকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। পরে আমার কাছে তিন লক্ষ টাকা দাবি করে। আমি টাকা না দেওয়ায় আমাকে রাস্তায় মানুষের সামনে নিয়ে চোর সাব্যস্ত করে এবং মামলার ভয় দেখিয়ে জোর করে লিখিত নিয়ে বিচারের মাধ্যমে জরিমানা করে। ঘাটভোগ ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম নন্দু বলেন, ফিরোজ শেখ আমার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বিষয়টি আমি জেনেছি । আইন অনুযায়ী যে বিচার হয় সেটাই আমি মেনে নেব। এ ব্যাপারে রূপসা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
Leave a Reply