সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসের উপসহকারী প্রাণিসম্প কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) মোঃ সারোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কৃত্রিম প্রজনন এর নামে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া, প্রাণী চিকিৎসার নামে অবৈধভাবে হাজার হাজার টাকা নেওয়াসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও জ্ঞাত বহির্ভূত পন্থায় অর্জিত অর্পাজনের টাকায় ৪তলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, সময়মতো সেবা না দেওয়া অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বুধবার (৯ জুলাই) সকালে সরজমিনে গেলে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের খামারী শাকিল আহমেদ জানান, বিনামূল্যের পশু চিকিৎসায় টাকা নেওয়া, সরবরাহ থাকার পরও কোম্পানির ঔষধ কিনতে বাধ্য করা, মাঠ পর্যায়ে প্রজননকর্মী ও ভিএফএ (ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিষ্ট্যান্ট) দের চাঁদাবাজি, সরকারি ঔষধে ঝুঁকিপূর্ণ নিরাপত্তা স্টিকার লাগানোসহ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।
তবে হাসপাতালে প্রাণী চিকিৎসা নিতে এসে প্রাণী মালিকদেরকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। আর সরকারি ৫০ টাকার ভ্যাকসিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়ও বিক্রি করা হয় মাঠ পর্যায়ে। এ নিয়ে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের সয়াগোবিন্দ মহল্লার খামারি ভুক্তভোগী সবুজ মিয়া বলেন, উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা( কৃত্রিম প্রজনন) সারোয়ার হোসেনকে তিন-চারবার ফোন করে অনুরোধ করার পর সে বাড়ীতে আসে। আসলে তাকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার নিচে দিলে রাগ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে আর আসে না।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, আমার প্রতিবেশীর জন্য ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ও হাসের ডাকপ্লেগ ভ্যাকসিন আনতে গিয়ে বেশি টাকা দিতে বাধ্য হয় উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেনকে। এদের লজ্জা-ভয় কোনটিই নেই।
খামারিরা জানায়, প্রতিটি খামার করতে তাদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম ও প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। খামারে কোনো রোগের উপদ্রব হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে টিকা ছাড়া আর কোনো ওষুধ কিংবা চিকিৎসাসেবা সময়মতো পান না তারা। স্বেচ্ছায় কোনো কর্মকর্তা খামার পরিদর্শন করেন না। উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেনকে প্রয়োজনে একাধিকবার ফোন করলেও একবার আসেন। সরকারী বিজ এর মূল্য ৭৫ টাকা। তিনি সেক্ষেত্রে প্রতিবার বিজ দিয়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা নেন। আর তার ভিজিট দিতে হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
খামারি আরিফ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে আমার একটি উন্নত জাতের ছাগল অসুস্থ হয়। বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসের উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,পিপিআই ভ্যাকসিন চার-পাঁচ দিন পরে আসবে আর তিনি পরের দিন সকালে আসবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু রাতে ছাগলটি মারা যায়। যার বাজারমূল্য ছিল ৩০ হাজার টাকা।
এদিকে অবৈধভাবে উপার্জিত এ টাকা দিয়ে তিনি সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সয়াধানগড়া মধ্যপাড়া (দারুল ইসলাম একাডেমীর পশ্চিমপার্শ্বে) ৫ শতক জমি কিনে আলিশান ৪ তলা বাড়ী নির্মাণ করেছেন। সরকারি সরকারি চাকরি আচরণ বিধি’র ১১ বিধিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে সরকারি কোন কর্মচারী আড়াই লক্ষ টাকার উপরে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়,বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে চাঃলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধান বা সরকারের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। এর বাইরে ক্রয়,বিক্রয় ও হস্তান্তর করা যাবে না। অপরদিকে ১২ বিধিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে ভবন নির্মাণ,ফ্লাট ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারবেন না। কিন্তু এসব এর কোন তোয়াক্কাই করেননি উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) সরোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। অপরদিকে নির্মিত ৪ তলা বাড়ীর জন্য সরকারের নিকট থেকে কোন অনুমোদন নেননি বলে তিনি অকপটে শিকার করে বলেন, সরকারি চাকরি আচরণ বিধি অনুযায়ী বাড়ী নির্মাণ করতে যে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তা অথবা সরকারের অনুমতি নিতে হয় তা আমার জানা নেই।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, জ্ঞাত আয় বহির্ভুতভাবে সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) মো. সারোয়ার হোসেন যে, বাড়ী নির্মাণ করেছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার,আর ব্যক্তিগত বিষয়ের সকল দায়ভার তার।
Leave a Reply